পায়ের তলায় বিশ্বকাপ ট্রফি ইস্যুতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী কবি মজিদ মাহমুদের পোস্ট

এই দৃশ্যটা আমার কাছে দারুণ লেগেছে। মনে হয়েছে- এটিই মূলত বাংলাদেশ ও ভারতের ক্রিকেটের অন্ধ ও অক্ষম ভক্তদের প্রতিক্রিয়ার সঠিক জবাব। যারা খেলাকে খেলা হিসাবে নিতে পারার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি, যারা খেলাকে ইহকাল পরকালের পবিত্র প্রতীক হিসাবে দেখে- এই ছবি তাদের জন্য। একজন প্রকৃত খেলোয়াড়ের কাছে তার প্রধান পুরস্কারে মাঠে, খেলার শিল্প, নিষ্ঠা ও নিমগ্নতায়, ফলাফল একমাত্র উদ্দেশ্য হতে পারে না খেলার । জয় এতই সাময়িক ও সংখ্যাতাত্ত্বিক প্রতীক ভিন্ন কিছু নয়। যতদিন না ভারত বাংলাদেশ খেলাকে খেলা হিসাবে দেখতে পারবে, ততদিন তারা খেলার দাস হিসাবে নিযুক্ত থাকবে। এই দেশগুলোর অধিকাংশ দর্শক মাঠে খেলা দেখতে যায় না, যায় দমিত রাজনীতির রুদ্ধ আবেগ প্রকাশ করতে, জাতীয়তা ও সাম্প্রদায়িকতার মনেবৃত্তি নিয়ে। তারা একজন সৌরভের কিংবা একজন শোয়েবের প্রশংসা করতে গিয়েও পাঁচবার ভাবে তাদের গোত্রীয় প্রভুরা তাদের কিভাবে নেবে। যারা এসব পদক-টদক পায়ের নিচে ছুঁড়ে ফেলতে পারে না, তারা কখনো খেলাকে বশীভূত করতে পারে না। রবীন্দ্রনাথের নোবেলের পদক চুরি হয়ে গেছে, নাইটহুড ত্যাগ করেছেন নিজে; কিন্তু জয়ের মর্যাদা তো তাঁকে ছেড়ে যায়নি। ভারতের হারে আমার কষ্ট আছে, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের মধ্যে অবশ্যই ভারতীয় দল আমার প্রিয়; কিন্তু গতকাল আমার সমর্থন ছিল অস্ট্রেলিয়া দলের প্রতি। কারণ মনে হচ্ছিল পুরো গ্যালারি জুড়ে যেন এক বন্য-ষাঁড়কে বধ করার জন্য একা মাঠে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু ম্যাক্সিমাসের মতো এই বন্য-বাইসন ওসব পবিত্র প্রার্থনার ভাষা বোঝে না, পবিত্র বোধে হত্যা হতে চায় না; তারা বরং বিপুল বিক্রমে গ্যালারির বর্বর উল্লাসকে প্রাণপণে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আমার কাল কেবলই মনে হচ্ছিল, একটা দেশে খেলা হচ্ছে, অথচ সৌজন্য বোধেও তো সে দেশের কিছু দর্শক অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে খেলা দেখতে আসতে পারতো, তাদের চার ছয় মারের পরে কিছুটা উল্লাস করতে পারতো। তাই খেলাকে পবিত্র জাতীয়তাবাদি হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার থেকে মুক্তি দিতে হলে, এই টফির উপর পা তুলে বসার মনোবল অর্জন করতে হবে সবার আগে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *