বই আলোচনা 

চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া: কিছু মিষ্টি কিছু কড়া
জহুর মুনিম

ছড়াকার হোসাইন মোস্তফার ছড়াগ্রন্থ ‘চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া’। ভাঙারি মাল দামি হয় না। হয় না মজবুতও। ছড়াগ্রন্থটির ছড়া কি তাহলে দুর্বল? পড়লেই বোঝা যাবে।

চল্লিশটি ছড়া দিয়ে সাজানো গ্রন্থটির প্রথম ছড়া ‘ভাঙারি ভাই’। ছড়াটিতে সমাজের চরম বাস্তবতা ফুটে ওঠেছে।
মানুষ যখন বুড়ো হয়ে যায়, তখন কেউ তাকে মূল্য দিতে চায় না। এমনকি নিজের ঘরেও মূল্য পায় না সে। সুযোগ থাকলে তাই ছেলে-মেয়েরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে দিয়ে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। আর কেউ সে সুযোগ না পেয়ে বুড়ো-বুড়ির মৃত্যু কামনা করে।

ছড়াটিতে এই বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছেন ছড়াকার এভাবে—
‘ময়লা-মলিন এই বুড়োটাই অদরকারি ঘরে
দিনেরাতে সারাক্ষণই কাশে খকখক করে।’

শেষ স্তবক—
‘যমেরও খুব অরুচি তাই কবে জানি মরে
ভাঙারি ভাই নেবে নাকি? দেবো মাগনা দরে।’

‘চাকর’ ছড়াটি শিশুশ্রম ও দাসত্বের প্রতিবাদে লেখা। ছড়াকার বলছেন—
‘ম্যাডাম বলে পা টিপে দে
সাহেব বলে চা কর
এত্তো টুকুন পিচ্চি ছেলে
এই বাড়িতে চাকর।’

আমাদের ঘরে যারা কাজ করে, তারা দরিদ্র বলে আমরা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি। তারা কিছু বলে না, বলতে পারে না। কারণ তাদের মাথা গোঁজার জায়গা নেই। লেখক রাগীস্বরে বলছেন—
‘অত্যাচারেও মুখ বুঝে থাক
হুকুম মত হা কর
সভ্য যুগেও কিছু মানুষ
দাস প্রথারই আকর।’

দরিদ্র মানুষের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায় ‘হারিয়ে যাওয়া দুল’ ছড়াতেও। প্রথম স্তবক—
‘হারিয়ে গেছে হঠাৎ নাকি
আজ ম্যাডামের দুল
সারাবাড়ি খোঁজাখুজি
কাণ্ড হুলস্থুল।’

ঘরে কিছু হারালেই আমরা কী করি? বুয়াকেই সন্দেহ করি। যেমনটা তিনি বলছেন—

‘অনেক খুঁজেও না পেয়ে তা
সবারই সন্দেহ
বুয়াকে তাই জেরা করে
সার্চ করে তন-দেহ।

শেষ দু স্তবক—

‘বুয়ার কান্না আহাজারি
সবই মারে ফেল
ধরে নিয়েই থানা-পুলিশ
দেয় যে তাকে জেল!

কদিন পরই সেই বাড়িতে
হাসি হুলস্থুল
বুকশেলফের তলায় মেলে
হারিয়ে যাওয়া দুল।

‘রিকশাওয়ালা’ ‘আমাদের ভাগ্যে’ ছড়াগুলোতেও অভাবিদের হয়ে কথা বলেছেন হোসা্ইন মোস্তফা।

ধনী মানেই যেভাবে সুখী নয়, তেমনি গরিব মানেই দুঃখী নয়; ‘গরিব থাকাই ভালা’ ছড়াটিতে দেখানো হয়েছে এটাই। যেমনটা বলছেন শুরুতে—
‘গরিব হয়েও সুখে আছি গরিব থাকাই ভালা
হয় না খেতে ঘুমের ঔষধ নাইরে ভূঁড়ির জ্বালা।’

পুরো ছড়াতে ধনীদের কী কী ঝামেলায় পড়তে হয়, তা দেখিয়েছেন। ছড়ার শেষে খোঁচা মেরেছেন সেই শিক্ষিতদের, যারা কলম দিয়ে চুরি করে পয়সাওয়ালা হয়েছেন। ছড়াকার বলছেন—
‘লাউয়ের ডগার মতো আমার জীবন সহজ সরল
লোক ঠকানোর ধান্দা তো নাই অন্তরে নাই গরল।’

ভাঙারি মালে কখনো কখনো ভালো জিনিষ পাওয়া যায়, হোসাইন মোস্তফার ‘চাঙারি ভরা ভাঙারি ছড়া’ও সেরকম। শুধু তাই নয়, ছড়াগ্রন্থটিতে আছে কিছু সমসাময়ীক ছড়া। গ্রন্থটি তাই সবাইকে পড়তে হবে।

মনিরুজ্জামান পলাশ-এর প্রচ্ছদে বইটি এসেছে শব্দশিল্প প্রকাশন থেকে। একশ পঞ্চাশ টাকা মূল্যের বইটি বেরিয়েছে ২০২৩ এর বইমেলায়।

একটি মন্তব্য

  1. ধন্যবাদ কাব্য কিশোরকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।