রাজাকারের ফাঁসি

রানা জামান

এরকম অশান্তিতে পড়ে যাবেন ভাবেন নি কখনো ওয়াজউদ্দিন। এতো ভয় দেখাবার পরও গ্রামের ছেলেরা মাঝেমধ্যে রাতের আঁধারে চলে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে। আর এই খারাপ খবরটা চলে যাচ্ছে থানার পাক বাহিনীর ক্যাম্পে। কে জানায়?

আজ মেজর আরবাজ খান শাঁসিয়েছেন আর একটা লোক কারংকা গ্রাম থেকে হারিয়ে গেলে সোজা ওকে ব্রাশ ফায়ার করে দেবেন!

পাকিস্তান প্রীতি থেকেই ওয়াজউদ্দীন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস এই যুদ্ধে বাঙ্গালিরা গো হারা হারবে! এই তো আর কটা দিন; তারপরই সুরসুর করে সবাই আত্মসমর্পণ করবে! তখন শেখ মুজিবের সবগুলা অনুসারিকে কুকুরের মতো পা চাটাবে! কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ। আরো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে গ্রামে। কড়াকড়ি করতে হবে যুবকদের গ্রাম ছাড়ার ব্যাপারে। মুদ্দা কথা, কাউকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে দেয়া হবে না!

সেকারণে বাড়ির সামনে রাজাকারদের দাঁড় করিয়ে শাঁসাচ্ছেন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াজউদ্দিন। রাজাকাররা আরো কড়া পাহারা দেবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওরা চলে গেলো। ওয়াজউদ্দিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন রাতে আরামে ঘুমাতে পারবেন ভেবে।

স্ত্রী পাশে এসে শুকনো মুখে বললেন, এখন কী হবে গো? রাজাকাররা কী ঠিক মতো ডিউটি করবো?

ওয়াজিউদ্দিন বললেন, করতেই হইবো! তেড়িবেড়ি করলে আগামীকাইল আমি নিজ হাতে ব্রাশ ফায়ার কইরা সবগুলারে কোতল কইরা দিবাম! তারপর নতুন কইরা রাজাকার বাহিনীতে লোক নিবাম। আমার একটা পোলা থাকলে অনেক সুবিধা হইতো অহন।ওরে কমান্ডার বানাইয়া আমি নাকে তেল দিয়া ঘুমাইতাম!কিন্তু আল্লায় আমারে কুনো পোলা দিলো না।

কড়া নাড়ার শব্দে গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওয়াজউদ্দীনের।তিনি ভাবলেন: রাজাকাররা পালিয়ে যেতে চাওয়া কাউকে ধরে নিয়ে এসেছে। ঘরের দরজা খুলে হতবাক।

গ্রামের হারিয়ে যাওয়া ছেলেগুলো অস্ত্র হাতে সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চিৎকার দেবার আগেই একজন ওর মুখ চেপে ধরলো। ওকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে বাইরে।

ওয়াজউদ্দিন রাজাকারদের আসার আশা করছেন। নিশ্চয়ই ওরা আসবে! উদ্ধার করবে ওকে।

মুক্তিযোদ্ধারা ওকে নিয়ে গেলো গো-হাঁটায়। ওর মুখটা কাপড় দিয়ে বেঁধে একটা দড়ি বাঁধতে চাইলে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে ছুটে যাবার চেষ্টা করেও পারলেন না ওয়াজউদ্দীন। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারটাকে ঝুলিয়ে দিলো বৃটিশ শাসন দেখা আমগাছের একটা মোটা ডালে।

ছবিসূত্র:  Quora

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *