মে দিবসের তাৎপর্য 
মোঃ নজির মোড়ল

আজ পহেলা মে। ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, এই দিনে মে দিবস পালিত হয়। প্রশ্ন হচ্ছে- এই মে দিবস মানে কী.? মে দিবস মানে- আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস!
তাই তো আজ টিভিতে শ্রমিক নেতা রহিম চৌধুরীকে সমাবেশের আয়োজনে দারাজ কন্ঠে ভাষণ দিতে দেখেছি।
কিন্তু উনার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম কয়েকজন নারী শ্রমিক দিনমজুরির কাজ করছেন।উনার বাড়ি ভরাট করতে মাটি কাটছেন। তবে অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেই নারী শ্রমিকগুলোর দিনমজুরি মাত্র আড়াইশত টাকা। যেখানে একজন পুরুষ কাজ করলে দিতে হতো পাঁচশত টাকা। অথচ কাজের ক্ষেত্রে নারীপুরুষ সমানই কাজ করছেন।
বিষয়টি জেনে বিবেকের দরজায় কড়া নাড়লে প্রশ্ন জাগলো- ” শ্রমিক দিবসের তাৎপর্য কি তবে
শহরের কোণায় কোণায় মঞ্চ করে
শুধু নেতা মন্ত্রীদের গাল ভরা ভাষণে
শ্রমিকের মর্যাদা চাই, শ্রমের ন্যায্য মূল্য চাই
ভাষণের শেষে শ্রমিকের রক্তের বিনিময়ে নিজের আখের গুছানো.? ”
অথচ মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলছেনঃ ” শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বের তার প্রাপ্য মজুরি দিন। ”
যাইহোক, দুপুরবেলায় চায়ের দোকানে বসে চা খাওয়ার সময় পত্রিকায় চোখ রাখতে গিয়ে একটা খবরের শিরোনাম দেখলাম যে, ” রাজধানীতে কাজের ভুয়ায় প্রাপ্য বেতন চাইতে গিয়ে বাসার মালিক কতৃক ধর্ষণের শিকার! ”
খবর পাঠে তখন আবার মনে প্রশ্ন জাগ্রত হলো- “এ কোন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস?
যে দিবসের দিনে শ্রমিকের ঘরে ক্ষুধার যন্ত্রণায়
মরে সংসার পরিজন ! এ কোন শ্রমিক দিবসের কথা বলে দেশের নেতা মন্ত্রীগন, যে দিবসের দিনে শ্রমিক মেয়ে ধর্ষিত হয়ে পুড়ে মরে অন্ধকারে ঝোপে জঙ্গলে! যে শ্রমিকের শ্রমের মূল্যে মালিকের রাজপ্রাসাদে বিচারের গলা টিপে মারে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার.? ”
একগুচ্ছ পরিশ্রমের বিনিময়ে যারা সুখসন্ধানি,
কপাল জুড়ে সংসার চালানোর দুশ্চিন্তার কালো মেঘ ; চাকার মতোন যাদের বছর গড়ায়। জগতে নেই সম্মান-স্বীকৃতি, সামাজিকতার চুঁইয়ে পরা নীতি।ভীষণ রকম উপহাসের নিদারুণ যন্ত্রণায় বুকে ব্যথা, প্রতিষ্ঠা নেই!
শুধুই নেই আর নেই এর বুলি ঝংকার তোলে শ্রম,অগাধ পরিশ্রম করার মানুষগুলো হচ্ছে প্রবাসী নামক টাকার মেশিনগুলো।
তাদের মধ্যে একজন হলেন আমার চাচাতো ভাই- করিম। বেশ কিছুদিন যাবৎ সে প্রবাসে কর্মরত! গতকাল রাতে অনলাইনে কল দিয়ে শুনিয়েছিল ঘটে যাওয়া তার এক করুণ কাহিনী! গত তিনমাস ধরে সে কাঠফাটা রোদে পুড়ে সেদেশে কনস্ট্রাকশনের কাজ করছিল। কোম্পানির বাঙালি প্রতিনিধি বলেছিল, তিনমাসের বেতন একসাথে পরিশোধ করবে। আজ তিনমাস পরে জানা গেছে সেই ব্যক্তি তার বেতন উঠিয়ে প্রতারণা করে পালিয়ে নিখোঁজ! সেই ব্যক্তির কোনো সন্ধান না পাওয়ায় টাকা পাওয়ার আশা নেই!
আমাদের চারপাশে এরকম হাজারো করিমের কান্না, আহাজারি রোজই কানে ভাসে। জাতির বিবেকের দরজায় কবে কড়া নড়বে? করিমরা কবে তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে?
তাই পরিশেষে বলতে চাই- ফেসবুকে পোস্ট আর শহরে মিছিল মিটিং এ শুধু মে দিবস নয়!বরং ঘর থেকেই মেহনতি ও শ্রমজীবি মানুষদের মূল্যায়ন করতে শুরু করুন। তাহলেই সম্মানিত হবেন প্রতিটি শ্রমিক ভাই বোন।
আপনি সচেতন হোন, আপনার শিশুদের মানুষকে মূল্যায়ন করতে শিক্ষা দিন। মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে ঐশ্বর্যের কাঙাল নয়, বরং মায়া-মমতা, শ্রদ্ধা-ভালোবাসার কাঙাল করে তুলুন। সন্তানদেরকে নৈতিকতাবোধ ও কৃতজ্ঞতাবোধ শিখান।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।