কবুত ও মহাজন
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ

কবুত একজন জেলের নাম। পাড়ার লোকেরা তাকে জেলে কবুত বলেই ডাকে। ঝড়তুফান,রোদ, বৃষ্টি রাতের অন্ধকারে কুপির আলো জেলে জাল ফেলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। জীবনের তাগিদে বেঁচে থাকার জন্য মাছ ধরার পেশা টা-ই বেছে নেন কবুত। খুব সাধারণ জীবন যাপন করেন কবুত। উত্তাল ঢেউয়ের সাথে সংগ্রাম করে মাছ ধরা তার পেশা। নদীতে জোয়ার ভাঁটা তো থাকেই। সারারাত কষ্ট করে জাল ফেলে মাছ ধরে সকাল বেলা মহাজনের কাছে অল্প টাকায় বিক্রি করেন। যে দাম পান তা সারারাতের পরিশ্রমের মূল্য হয়না বললেই চলে। আর মহাজন অল্প টাকায় ক্রয় করে বাজারে নিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন। মহাজন অল্প পরিশ্রম করে বেশি টাকা লাভবান হন আর কবুত গাধার মতো খেটেও অল্প পারিশ্রমিক পান। এতেই কবুত মহা খুশি। এতে কোন রকম কবুতের সংসার চলে। অভাব অনটন প্রতিনিয়ত লেগেই থাকে। কোন দিন জালে বেশি মাছ ধরা পড়ে আবার কোন দিন জালে অল্প মাছ ধরা পড়ে। কোন দিন জালে বড় মাছ ধরা পড়ে। যেদিন বেশি মাছ ধরা পড়ে সেদিন কবুত খুব খুশি হয়। আর যেদিন কম ধরা পড়ে সেদিন কবুত খুব চিন্তা করে এই অল্প মাছ আর কয় টাকা বিক্রি করা যাবে। এভাবেই কবুতের সংসার চলে। কখনো আয়ের মুখ চোখে দেখেনা। বউ পোলাপান নিয়ে অভাবের সংসার কবুতের। নুন আনতে পান্তা ফুরায়। পোলাপানদের স্কুলে পাঠানোর সুযোগ হয়না। কখনো বউয়ের কোন আবদার পূরণ করতে পারেনা। আর নিজের সখ আল্লাদ নাই বটে। কবুত সাদাসিধা একজন জেলে মানুষ। কালো চেহারার মাঝে যেন একটি নিষ্পাপ হাসি লেগে থাকে। একথা বললেই নয়,কবুতের বউ একটু চালাকচতুর ছিলো। কিভাবে মাছের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় সেই বুদ্ধি শিখিয়ে দিতো কিন্তু কবুত তার কোন গুরুত্ব দেয়নি। এদিকে মহাজন ও কম বুদ্ধিমান নন কিভাবে কবুত কে ঠকিয়ে নিজে লাভবান হবেন সেই পায়তারা করতেন। একদিন কবুতের বউ কবুত কে বললো, আজ সারারাত যে মাছ পাইবা তা সকাল বেলা নদীর ঘাটে বিক্রি করবা না, বাড়িতে নিয়ে আসবা। একথা শুনে কবুত খুব চিন্তায় পড়ে গেলো। যদি মাছ বিক্রি না করে বাড়িতে নিয়ে আসি তাহলে টাকা কোথায় পাবো সংসার ই-বা চলবে কি করে। ঠিক পরের দিন কবুত বউয়ের কথা মতো মাছ বিক্রি করবে না বলে মহাজন কে বললো, মহাজন বিপাকে পড়ে গেলো আজ যদি মাছ না নিয়ে যাই তাহলে লাভবান হতে পারবোনা। আর যদি কবুত মাছ নিয়ে বাজারে খুচরা দামে বিক্রি করে বেশি টাকা লাভবান হয় তাহলে আমার কাছে আর মাছ বিক্রি করবে না। কবুত চালাক হয়ে যাবে, বুঝতে পারবে এতোদিন আমি কবুত কে ঠকিয়ে লাভবান হয়েছি,না তা হতে দেওয়া যাবে না। কবুত কে যেভাবেই হোক ভয় দেখিয়ে মাছ কিনতে হবে। আচ্ছা কবুত তোকে কে এই বুদ্ধি শিখিয়ে দিলো মাছ বিক্রি না করার জন্য? কবুত সহজেই বউয়ের কথা বলে দিলো। আজ যদি বউয়ের কথা মাছ বিক্রি না করিস তাহলে তর ঘরে আগুন জ্বলবে না, পোলাপান নিয়ে না খেয়ে থাকবি এটা কি হয়? ঠিক বলেছেন মহাজন সাব সারারাত পরিশ্রম করে না খেয়ে থাকতে পারবোনা। এই নেন মাছ টাকা দিন। শুন কবুত, তুই যে গুঁড়া মাছ ধরিস তা অপরাধ তুই জানিস? তুই সাধারণ মানুষ তোকে যদি আইনের লোক ধরে নিয়ে যায় তাহলে ছুটে আসতে পারবিনা। তুই ঘাটে বিক্রি করস বলেই কোন রকম ঝামেলা পড়তে হয়না। তর বউ মনে করে আমি বেশি লাভবান হই, বিশ্বাস কর সব গুলো মাছ বিক্রি করে এক দুই টাকা লাভবান হই। ঠিক আছে মহাজন সাব আমি যাই। শুন প্রতিদিন আমার কাছে মাছ বিক্রি করে দিবি বউয়ের কথা শুনিস না,পরে বিপদে পড়বি। কবুত টাকা নিয়ে বাড়িতে যেতেই বউ বললো, মাছ নিয়ে আসোনি? মাছ দিয়ে তুমি কি করবা এই নাও টাকা। তাছাড়া তোমার কথা শুনলে বিপদে পরতে হইবো। তোমারে এই কথা মহাজনে শিখাইয়া দিসে। আমার কথা তোমার ভালো লাগে না যাও আজ বাজারে গিয়ে দেখো মহাজন কতো টাকা লাভবান হয়। কবুত বাজারে যেতে রাজি না। তুমি বাজারে না যাও আমি যাবো তার পর তুমি বুঝতে পারবে মহাজন তোমাকে ঠকিয়ে কতো লাভবান হয়। ঠিক আছে কাল সব মাছ তোমার হাতে দিবো দেখি তুমি কতো লাভবান হও। পরের দিন কবুতের বউ মাছ নিয়ে বাজারে বিক্রি করে তিন গুণ লাভবান হয়। কবুত মহা খুশি সত্যিই মহাজন এতোদিন আমাকে ঠকিয়ে লাভবান হয়েছে। কবুত বুঝতে পারলো বউয়ের ধারণাই সঠিক। মহাজনেরা শ্রমিক কে ঠকিয়ে তারা নিজেরাই লাভবান হতে চেষ্টা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *