প্রিয়তমা,
বিগত বহুবছর পেরিয়ে আবার তোমায় লিখতে বসেছি। কিন্তু সেদিনের সেই অনুভূতিটা আজ আর নেই। কারণ তুমি চলে গেছো অন্য জগতের বাসিন্দা হয়ে। এখন তুমি-আমি এক ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। আর কখনোই দেখা হবে না। তোমার কি মনে পড়ে? সেদিন ছিল ফাল্গুনের প্রথম দিন। আমি তোমায় দেখেছিলাম অপলোকে, যে দৃষ্টিতে মিশে ছিল পৃথিবীর বিশুদ্ধতম ভালোবাসা। যে ভালোবাসার মাঝে লুকিয়ে ছিল অলিখিত মোহ ও মায়ার সম্পর্কের এক অদৃশ্য বাঁধন।

ছবি: ফেসবুক।

তারপর স্বপ্নময় যাত্রা। বেশ কিছুদিন মুক্তবিহঙ্গে তুমি-আমি মিশে একাকার। অতঃপর স্বপ্নের প্রত্যাশায় যাত্রা শুরু। একটা সময় কাছে পাওয়ার প্রত্যাশা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। সবই ঠিকঠাক ছিল। গন্তব্যের দিকে হাঁটছিলাম দুজন সঠিক পন্থায়। তবে প্রকৃতির লীলায় কখন যেন ঝড় উঠে, দূরত্ব বাড়ে। একরাশ অভিমানের ছায়া ঢেকে ফেলে আমাদের। সমাজের বাস্তবতার কাছে প্রতিনিয়ত হেরে যাওয়া, স্বপ্নযাত্রায় প্রতিটা ধাপে বাধাপ্রাপ্ত জীবন। তবুও যখন পথভ্রষ্ট হয়ে দুজন দু প্রান্তে চলে গেলাম! প্রত্যাশার খেয়ায় রাত্রি নামলে ভাবতাম তুমি তো নিঃশ্বাস নিয়ে কোন এক প্রান্তে লুকিয়ে আছোই, হয়তোবা অপেক্ষার প্রহর গুনছো। জানোতো! আমিও ঠিক একই অপেক্ষার প্রহর গুনছিলাম। হাজার বছর আর্তনাদের রাত পেরিয়ে হয়তো একটি মধুমাখা জোছনা রাত নামবে আমার জীবনে। প্রতিনিয়ত সেই আশায় ফুটপাত মারিয়ে ঘাম ঝরিয়ে ঘরে ফিরতাম। তোমার মনে পড়ে কিনা জানিনা? আজকের রাতটি প্রতিনিয়ত স্মৃতি মেখে ফিরে আসতো আমার জীবনে। আমি স্মৃতিকাতর হয়ে তোমার কণ্ঠ শোনার প্রতীক্ষায় থাকতাম। সাহস করে একদিন ফোন দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু ওই যে অভিমান নামক বিষাক্ত অনুভূতির কাছে হেরে গিয়ে কন্ঠটা আর শোনা হয়নি। আজ বহু বছর পরে আবার সেই রাত্রি নেমেছে কিন্তু অনেকটাই ভিন্নতা ও শূন্যতায় আচ্ছন্ন হয়ে। চেনা শহর টা যেন বড়ই অচেনা লাগছে। কোথায় কি যেন নেই। আসমান ও জমিনের মাঝে মধ্যাকর্ষণ বলহীন একজন প্রতিবিম্ব মনে হচ্ছে নিজেকে। প্রতিটা সময় ফুটন্ত ফুল হয়ে দেখা দিতাম তোমায়। হাতে থাকতো একগুচ্ছ গন্ধ ছড়ানো রজনীগন্ধা কিন্তু তুমিতো রজনীগন্ধা পছন্দ করো না। তুমি চাইতে লাল টকটকে একজোড়া গোলাপ। আমি তোমার চাওয়াকেই প্রাধান্য দিয়ে রজনীগন্ধাকে ছেড়ে গোলাপকে ভালোবাসতে শুরু করলাম। তুমি হয়তোবা জানতেনা রজনীগন্ধা শুকিয়ে গেলেও সুঘ্রান টা অনেকটা সময় ধরে থেকে যায় কিন্তু গোলাপ যখন শুকিয়ে যায় তখন একটি করে পাপড়ি ঝরে যাওয়া শুরু হয়। তুমি হয়তোবা সেই ঝড়ে যাওয়া গোলাপ। তাইতো আজ তুমি ঝরে গেছো। বিলুপ্তি ঘটেছে একটি অধ্যায়ের। না! আজ আর কোন অভিযোগ নেই। আকাশে মেঘ জমেছে। কিছু সময় বাদেই বৃষ্টি নামবে। আমি মেঘ যুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আজও অনেকগুলো গাঁদার মাঝে একজোড়া ফুটন্ত গোলাপ নিয়ে এসেছি। যে গোলাপ কোন অভিযোগের প্রলাপ শোনাতে আসেনি, এসেছে বিলাপ করতে। যখন তুমি পৃথিবীর শেষ নিঃশ্বাসটা ত্যাগ করতে চলেছো, আমি আছি মানচিত্রের এক কোনায়। খবর এলো তুমি প্রশান্তির চির নিদ্রায় আচ্ছাদিত, আমি তখনো ভরা মঞ্চে লোক হাসাতে ব্যস্ত।
আজ কোন অনুভূতি নেই। যেন সবকিছুই সঠিক নিয়মে চলছে। ভেতরের আত্মা তো সেই কবেই গোরস্থানে চলে গেছে। শরীরটাই শুধু দণ্ডায়মান একটি কাঠামো। জানিনা কোন কষ্ট নিয়ে চলে গেলে কি না। যদি সত্যিই কোন কষ্ট নিয়ে চলে গিয়ে থাকো তবে শেষবারের মতো ক্ষমা করো আমায়। কারণ এটাই হয়তো হতে পারে পত্রমিতালীর শেষ পত্র। ভালো থেকো, তোমার আগমনের রাত্রিতে স্রষ্টার কাছে আবেদনপত্র দাখিল করছি, তিনি যেন তোমায় পরপারে শান্তির জায়গা বরাদ্দ করেন। আমি জাদুর ফেরিওয়ালা তবে পৃথিবীর কঠিন বাস্তবতার কাছে তোমাকে ফিরে পাওয়ার জাদু আমি জানিনা। তাই কঠিন সত্য মেনে তোমার সমাধিতে এঁকে দিলাম আমার শেষ ভালোবাসার চিহ্ন। শুভ জন্মদিনের আগমনী সন্ধ্যার কয়েকদিনের ব্যবধানে তুমি চলে গেছো। তাই তোমাকে আজ কোন অভিনন্দন বার্তা নয়, তোমার জন্য রইল অফুরন্ত দোয়া।

ইতি
-তোমার এক সময়ের প্রিয় মানুষ

বাংলার মিস্টার বিন

রাশেদ শিকদার
বাংলার মিস্টার বিন খ‍্যাত জাদুশিল্পী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।