পুকুরটা খুব অসুস্থ
শাকিব হুসাইন

শাকিব হুসাইন

এই যে একটা পুকুর। পুকুরটাতে কারা বসবাস করে? নিশ্চয়ই মাছেরা। কাঁকড়ারাও থাকে। পুকুরের চারদিকে সারি সারি বিল্ডিং। কোনোটা তিনতলা। আবার কোনোটা পাঁচতলা। ওরে বাবা! কোনোটা তো আবার দশতলাও হবে।
দশতলা, পাঁচতলা, তিনতলা বিল্ডিংয়ের সবাই আরাম—আয়েশেই আছে। কিন্তু এই যে পুকুরটা। মোটেও ভালো নেই। ভীষণ অসুস্থ। চিকিৎসা করার মতো কেউ নেই। কেমন করে এতো অসুস্থ হয়ে পড়ল শুনবে না? তাহলে বলি কেমন?
পুকুরটার অতোটা বড়ও নয়৷ এই তো দৈর্ঘ্যে সারে সাতাশ ফুট আর প্রস্থে সারে পনেরো ফুট। কিছুদিন আগেই মাছেরা এখানে সুখে-শান্তিতে থাকত। মাছেদের সাথে কাঁকড়ারাও থাকত। কিন্তু বর্তমানে মাছেরা তেমন ভালো নেই৷ এই তো সেদিন পুঁটি পাড়ায় কান্নার রোল পড়ে গেল। দু’একজন বাদে সবার সে কী জ্বর! একশো তিন ডিগ্রিও পার করেছিল। পুঁটি পাড়ার পর টেংরা পাড়ায়। টেংরা পাড়ায় তো একশো তিন ডিগ্রিরও বেশি। জ্বরের তোড়ে তো বুড়ো টেংরা দাদু পটল তুলল।
টেংরা পাড়ার পরপরই খলসে পাড়ায়। নিমিষেই পুরো পুকুরে জ্বরের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ল। এমনকি শোল, বোয়াল, মাগুরেরাও রেহাই পেল না৷ কাঁকড়ারাও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ল।
পুকুরের এরকম অবস্থার কথা শুনে পাশের একটা নর্দমা থেকে মৃগেল এল। মৃগেল অনেক বড় ডাক্তার। মাঝেমাঝেই এই পুকুরে আসা-যাওয়া তাঁর৷ পুকুরের এরকম ভয়াবহ অবস্থা দেখে সবাইকে বোয়ালের ডেরায় ডাকল মৃগেল ডাক্তার।
বিকেলবেলা সবাই এল। মৃগেল ডাক্তার বলল—আমার কথা মন দিয়ে শোনো সবাই। আচ্ছা, তোমাদের পুকুরে আচানক এরকম অবস্থা হল কেন? তোমরা কি তা জানো?
বোয়াল রাজা বলল— আমরা কী করে জানব মৃগেল ডাক্তার। তুমিই বল?
মৃগেল ডাক্তার বলল— তোমাদের এরকম অবস্থার কারণ, তোমরা এতোটাই নোংরা পানিতে বাস কর যে বলে বোঝানো যাবে না। এই যে দেখো উপরে কত্ত কত্ত ময়লা-আবর্জনা। বাসি পঁচা খাবার৷ নোংরা নোংরা সব জিনিসপত্র পড়ে আছে। যেগুলো শেওলা আগে ছিল ওগুলোও আর নাই৷ ময়লা ওদের খেয়ে ফেলেছে। এসব নোংরা ময়লা-আবর্জনার জন্যই পানি দূষিত হচ্ছে। আর সেই সাথে তোমরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছ৷ মূল কথা হল, পুরো পুকুরটাই আজ ভীষণ অসুস্থ।
মৃগেল ডাক্তারের কথা শেষ হতেই শোল দাদু বলল— এর থেকে কীভাবে বাঁচব মৃগেল ডাক্তার?
মৃগেল ডাক্তার বলল—তোমাদে কিছুই করার নেই। ঐ যে বিল্ডিংয়ে যারা থাকে ওরা যদি সচেতন হয় তাহলেই তোমরা সুস্থ থাকবে। খলসে পিসি বলল— ওরা কবে সচেতন হবে ডাক্তার বাবু?
মৃগেল ডাক্তার বলল— তা আমি জানি না খলসে পিসি। ওরা যতদিন না সচেতন হবে ততদিন ততদিন তোমরা অসুস্থ থেকেই যাবে। অসুস্থ থেকে যাবে এই পুকুর।
হঠাৎ ছোট্ট পুঁটি মা চেঁচিয়ে বলে ওঠে— এই যে বিল্ডিংয়ের মানুষেরা একটু তো সচেতন হও। আমাদের বাঁচতে দাও। পুকুরটাকে বাঁচতে দাও। ছোট্ট পুঁটি মার চিৎকার মানুষের কানে পৌঁছায় না। কোনদিন পৌঁছাবেও না…

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।