হঠাৎ পরিবর্তন
মো. ইব্রাহিম জুয়েল
আবির কখন যে কি করে বসে তার নিজের এ ঠিক নেই। তামাম এলাকার লোকজনের সাথে তার চেনাজানা। পুরো এলাকা আবির কে চিনে না এমন মানুষ খবু কম। তার দুষ্টামির জন্য সবাই তাকে দুষ্ট ছেলে হিসাবে ডাকে। কখনো কাউকে বোকা বানায়, কারো গাছের ফল চুরি করে গুলন দিয়ে পাখি মারে। এইদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে। যে যাখানে যাক না কেন কোনো না কোনো অঘটন করে আসবে কারণ এটাই তার স্বভাব। আচ্ছা বলা হয় নি আবির নবম শ্রেণীর ছাত্র। করোনা কালীন সময়ে যখন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তখন সে অষ্টম শ্রেণিতে ছিল পরীক্ষা ছাড়াই নবম শ্রেণীতে উঠে গেছে। দীর্ঘ ১ বছর যখন সবাই চারদেয়ালে বন্দি তখন আবির নিজ মনে ছুটতে থাকলো । পড়াশোনার চাপ নেই তেমনটা।
আবির মনে মনে এতটাই খুশি যে স্কুল আরো কয়েকদিন বন্ধ থাকুক তার ইচ্চা যে বিদ্যালয় আর নাই এই খুলুক। তার এক বন্ধু ছিল জিসান বলতে পারেন তার দুষ্ট কাজের সাথী। জিসান একটু পড়াশোনামুখী তেমনটা বের হয় না। তাছাড়া এখন ত মহামারী এইসময় সবাই আত্মক। চারোদিকে যেন প্রিয়জন হারানোর কান্না। জিসান একটু সুস্থ থাকার জন্য সময়টা এখন ঘরে কাটায় পরিবারের সাথে। একদিকে আবিরের নাজেহাল অবস্থা মানুষজন যখন ব্যস্ত পরিবার পরিজন নিয়ে তখন সেই যেন আরো পেইন দিচ্ছে সবাইকে। একদিন এলাকার বড় ভাই তার নামে বিচার দিল তার বাবা হামিদ সাহেবের কাছে। হামিদ সাহেব তিনি একজন শিক্ষক। ছেলের কুকর্মের কথা শুনি তার বাবা লজ্জিত।অন্তত দুঃখের সহিত বলল আজকে আসলে তাকে আমি বুজয়ে বলবো বিষয়টা। খবরের কাগজ খুলতে না খুলতে ১২৩ জনের মৃত্যু করোনা ভাইরাসে। তার বাবা আরো চিন্তিত হয়ে গেল ছেলেকে কিভাবে সমাল দিব ওতো আমার একটা কথাও শুনে না। হঠাৎ করে শুনতে পায় তাদের পাশের বাসা একজন করোনা আক্রান্ত হামিদ সাহেবের মাথাটা যেন কাটা কেম্পাস ন্যায় ৩৬০° ডিগ্রিতে ঘুরছে। আর খুবই চিন্তিত হয়ে উঠলো কখন না কখন নিজেদের উপর চলে আসে। তাদের পুরো এলাকা এখন লকডাওন পুলিশ সারাক্ষণ পাহারা দিচ্ছে জুরুরি কাজ ছাড়া বের হওয়া নিষেধ। এইদিক দিয়ে আবির মন খারাপ হয়ে গেল সে তো ঘরে বসে থাকার মত ছেলেই না পুরোই বোরিং টাইম কাটাচ্ছে ও। বুদ্ধি খুঁজতেছে কিভাবে ঘর থেকে বের হওয়া যায়?
ঘর যে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে। কী করা পরিবেশ কাছে শেষমেশ হার মানতে হলো আবিরকে। তার বাবা দেখতে পেল তার ছেলের মন খারাপ কিভাবে মন ভালো করা যায় শিক্ষক বাবার খুব ভালো করেই জানা আছে। আবীরকে শান্তনা দিতে লাগলো তাতেও আবিরের মন ভালো হচ্ছে না!!.. ঘরে যে তার ধম বন্ধ হয়ে আসছে তার বাবাকে প্রশ্ন করলো আচ্ছা বাবা এইভাবে কয়দিন ঘরে বসে থাকা যায়। আমার কাছে বাহিরে দৃশ্য না খুব প্রিয় বাহিরে সৌন্দর্য ছাড়া জীবনটা পুরো আলু বিহীন সিংগারা মত, আলো ছাড়া প্রদীপের মত। বাবা ছেলেদের কথপোকথন মধ্যে মায়ের ফোনের রিং বেজে উঠলো। তার ছোট মামা ফোন দিয়েছে হঠাৎ করে শুনতে পায় তার নানাভাই ও বেঁচে নেই।এই কথা শুনার পড় তার মায়ের মাথায় যেন ওহুদ পাহাড় ভেঙে পড়লো সাথে সাথে অঞান হয়ে লুটে পড়লো মাটিতে। করোনা যে তার প্রিয় ব্যক্তিটাকে কেঁড়ে নিল।
চোখ দিয়ে টলমল করে পানি পড়ে আবিরের কি হচ্ছে কিছুই বুজতেছে না সে। চারদিকে শুধুই হাহাকার কান্না আর কান্না। আবির মনে উঠলো যে তাদের প্রতিবেশীরা কেমন আছে তারা সবাই আছে তো আগের মত তা দেখতে শত বাধা ফেরিয়ে ছুটলো সে। খোঁজ রাখা দরকার তাদের।
প্রতিবেশী হিসাবে তার কর্তব্য। করোনা মহামারিতে দ্রব্যমূলের দাম ও খুব বেড়ে গেছে। একদিক দিয়ে কাজ কর্ম নেই ঘর থেকে বের হওয়া যে নিষিদ্ধ। তার মনে পড়লো যারা দিনে আয় করে দিনে খরচ করে তাদের কী আবস্থা। দেখতে গিয়ে দেখে যে কী এক করুন অবস্থা কেউ যে ভালো নেই অনেক এ না খেয়ে আছে টাকা ঋণ করতে করতে এখন আর সম্ভব হচ্ছে না।
আয়ের চাবিকাঠি ও যে বন্ধ। দু মুটো ভাত ডালের জন্য তাদের খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে আবির হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলো তার চোখের পানি যেন টলমল করছে। এই পরিস্থিতি দেখে দৌড়ে বাসায় আসলো তার বাবাকে সব কথা খুলে বললো। তার বাবা তার এমন কথা শুনে স্যতি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। তার বাবা ভালো কাজে আর বাধা দিতে পারেনি। আবির দিন রাত ছুটছে কার বাসায় খাবার নেই কে অসুস্থ সব খোঁজ খবর রাখছে নিজেই। পুরো এলাকার মানুষ যখন চারদিয়ালে বন্দি তখন সে যেন বীরের মত ছুটছে অসহায় মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে।
এলাকায় এখন তার নামে ব্যাপক সুনাম ছড়িয়ে যাচ্ছে।সবাই বলতে লাগলো দুষ্ট ছেলেটাই আজ দুঃসময়ে পাশে। আবির প্রায় অসংখ্য পরিবারে পাশে ছিলেন অন্যের ভালো দেখতে দেখতে নিজের কথায় ভুলে গেলেন। একদিন হঠাৎ আবির অসুস্থ হয়ে পরে খুবই খারাপ অবস্থা!! ডাক্তার কাছে নিলে ধরা পরে আবিরের শরীরে করোনা ভইরাস। তার বাবা মায়ের মাথায় হাত একমাত্র ছেলে আবির তার তো কিছুই হতে দাওয়া যাবে না। কান্না ভেঙে পড়েন বাবা মা। চিকিৎসক পরমর্শে দীর্ঘ ৭ দিন করোনা ভাইরাস সাথে যুদ্ধ করে শেষমেশ পরাজিত বরণ করে আবির। হাসপাতালে নিথর ভাবে পরে রইলো তার দেহ। তার আশেপাশে যাওয়াটাই যে নিষেধ। পৃথিবীটাকে আবার সুন্দর রূপে দেখার শেষ ইচ্ছে পূরণ হলো না। নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে অন্যের জন্য ঝাপিয়ে পড়া আবিরের মৃত্যু শুনে এলাকার প্রতিবেশীদের চোখ দিয়ে পানি টলমল করে পরতে লাগলো পানি মুজতে মুজতে বলতে লাগলো তার মত দুষ্ট ছেলে এলাকায় আর একটি ও দেখিনি যে অন্যের জন্য নিজের প্রাণটাই দিয়ে দিলো। আর বলতে লাগলো আবির সারাজীবন আমাদের মনের মাঝেই থাকবে!
লেখক
নাম : মো: ইব্রাহিম জুয়েল
ঠিকানা : ফুলগাজী, ফেনী
কলেজ : ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট