চোতরা পাতা চিকিৎসা

রানা জামান

গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ঢং-এর কোনো কাজ না পেয়ে কোচরের শেষ ক’টা টাকা দিয়ে একটা ক্রাচ কিনে ফেললো জব্বর। ওর কাছে আর কোনো টাকা না থাকলেও চিন্তিত নয় ও। শিশুমেলার মোড় থেকে বাংলাদেশ বেতারের মোড় পর্যন্ত খুড়িয়ে হেঁটে ভিক্ষা করতে শুরু করলো। টাকার অভাব আর থাকলো না ওর। তবে এই রাস্তায় ভিক্ষা করার জন্য ট্রাফিক সার্জেণ্টকে ঘুষ দিতে হয়। শুধু ও না, সবাইকে দিতে হচ্ছে।
জব্বর আরেকটা বিষয় লক্ষ করেছে ট্রাফিক সার্জেণ্ট, ওর নাম আলাওল, লক্করঝক্কর বাস না আটকালেও মোটরবাইক এলেই আটকে রাস্তার পাশে নিয়ে যায় এবং যতই কাগজপত্র ঠিক থাকুক না কেনো মামলার ভয় দেখিয়ে ঘুষ আদায় করে যাচ্ছে। ওর কী তাতে!

জব্বর ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে ভিক্ষে করে যাচ্ছে। প্রতি মাসে কিছু না কিছু টাকা পাঠাচ্ছে বাড়িতে বৌ-বাচ্চাদের জন্য। যতই ও দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চাক, কিন্তু যখন সার্জেণ্ট কোনো বাইকারকে আটকায় তখন অজান্তে ওর দৃষ্টি চলে যায় ওদিকে।

সহকর্মীদের সাথে মাঝে মাঝে জব্বর এটা নিয়ে কথা বললে, ওরা বলে, আমাগো কী! আমাগোও ছাড় দিতাছে না সারজেন! ঢাকায় কাম করতে হইলে পুলিশরে ঘুষ দিতে অইবো।

ছয় মাস পরে জব্বর গাঁয়ের বাড়ি এলো। ছেলেমেয়ে বৌ সবাই খুব খুশি। গাঁয়ে কোনো কাজ নেই। দুই শিশুকে দুই কাঁধে নিয়ে গাঁয়ের রাস্তা ধরে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

একদিন দক্ষিণপাড়ার সামনে একটা বালককে দুই হাতে শরীর চুলকাতে চুলকাতে লাফাতে ও কাঁদতে দেখলো। ও এমন করছে কেনে জিজ্ঞেস করায় বালকটি বললো যে ওর ছোট ভাই ওর গায়ে চোতরা পাতা ঘষে দিয়েছে। জব্বর চোতরা পাতা চিনে।

দুই দিন পরে জব্বর চলে এলো ঢাকা। ও ভিক্ষা করে যাচ্ছে। সার্জেণ্ট আলাওল জ্যামে এক ট্রাকের কাগজপত্র দেখছেন। জব্বর হৃদপিণ্ডের স্পন্দন যথাসম্ভব সংযত রেখে এগিয়ে গেলো ওদিকে। সার্জণ্ট আলাওলের একদম গা ঘেঁষে ঝোলা থেকে চোতরা পাতার টুকরো সার্জেণ্টের ঘাড় ও দুই বাহুতে ছড়িয়ে দিয়ে সরে এলো। জব্বর তাকিয়ে আছে সার্জেণ্ট আলাওলের দিকে।

সার্জেণ্ট আলাওল প্রথমে ঘাড় চুলকালো, পরে বাহু। চুলকানি বাড়ছে। হাতের কাগজ ফেলে দিয়ে চুলকাতে

লাগলো শরীর। শুরু হলো সার্জেণ্টের লাফালাফি।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *