আসাদ বিন সফিক:
মাইকেল মধুসূদন দত্ত যখন সনেট লিখতেন, তখন সনেট নিয়ে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করেছেন। এখনো হয়তো যারা সনেট সম্পর্কে জানে না, তারাও একই মন্তব্য করে। নতুনত্বের বিরোধিতা যুগে যুগে ছিল, আছে, থাকবে। প্যালিন্ড্রোম প্রথম লিখেন শরৎচন্দ্র পন্ডিত দাদা ঠাকুর। এরপর লিখেন সৌমিক দে। আর বাংলাদেশে সৌমিত্র চক্রবর্তী। দীর্ঘদিন এটা নিয়ে কেউ গবেষণা করেননি। পরবর্তীতে প্যালিন্ড্রোম নিয়ে গবেষণা শুরু করেন ফরিদ উদ্দিন ( ফরিদ সাদরিফ)।সংক্ষিপ্ত করে বলতে গেলে তিনিই ইতিহাসে প্রথম স্বাক্ষর করেন, বাংলাদেশের প্রথম প্যালিন্ড্রোম একক কাব্যগ্রন্থ 'কথা থাক' প্রকাশ করে। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে হাফেজ আহমেদ প্যালিন্ড্রোম স্বরবৃত্তে, অক্ষরবৃত্তে , মাত্রাবৃত্তে, গদ্য , লিমেরিক ও হাইকো ছন্দে 'মাটি মা' একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রচলিত বিখ্যাত কবিতার নিয়মে বাংলা ভাষায় প্যালিন্ড্রোম ভার্সনে লিখেন। একই সাথে বই প্রকাশ করেন সঞ্জয় মুখার্জি প্যালিন্ড্রোম কবিতাবলি । তিনি কুমিল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। পরবর্তীতে অণুগল্পের বই লিখেন ইসমাইল হোসেন হিরা। এবার আসি শারমিন সরকারের একক প্যালিন্ড্রোম কাব্যগ্রন্থের কথায়। কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত কথা দিয়েই শুরু করি। বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। শারমিন সরকার সেই অর্ধেক আনিয়াছেন এবং গর্বিত ইতিহাসে স্বাক্ষর রেখেছেন। অর্থাৎ বাংলা সাহিত্যে প্রথম নারী হিসেবে প্যালিন্ড্রোম কাব্যগ্রন্থ 'পলাত্রা পত্রালাপ' প্রকাশ করেন। প্যালিন্ড্রোম কাব্য লিখতে পারা, আলু সিদ্ধ করার মতো সহজ কাজ নয়, অন্তত নখ দিয়ে গাছ কাঁটার মতো। যাঁরা প্যালিন্ড্রোম সম্পর্কে একটু হলেও জেনেছেন, তাঁরা বুঝবেন বিষয়টি কঠিন কিন্তু মজার। প্যালিন্ড্রোম সহজ একটি অর্থ বলা রাখা ভালো।একটি শব্দ বা বাক্যকে ডান দিক থেকে পড়লে যে অর্থ প্রকাশ হয়, বাম দিক থেকে পড়লে একই অর্থ প্রকাশ হয়। এমন মজাদার বিষয়ে জানার জন্য 'কল্পক' 'মাটি মা' ও 'পলাত্রা পত্রালাপ' বইগুলো সংগ্রহ করে পড়তে পারেন।লক্ষ্য করুন, প্রত্যেকটি বইয়ের নাম প্যালিন্ড্রোম।ডানে বামে পড়লে একই অর্থ প্রকাশ করে। সনেট দিয়ে যেহেতু শুরু করেছি সনেট দিয়েই শেষ করি। মাইকেল মধুসূদন দত্তের পর ,সনেট নিয়ে খুব লিখেন ফরিদ আহমদ।সনেট নিয়ে লেখালেখি করা তাঁর কাছে আন্দোলনের মতো ছিল। তাই তাকে 'সনেট' কবি বলা হয়। তার ভাবনা ছিল গিনেজ ওয়ার্ল্ডে 'সনেট' স্বাক্ষরের রেকর্ড করবে।এখানে তিনি শতভাগ সফল। বাংলা ভাষায় প্রথম প্যালিন্ড্রোম লিখেছেন শরৎচন্দ্র পন্ডিত দাদা ঠাকুর। আর তাঁর পর প্যালিন্ড্রোম নিয়ে খেলায় মেতে ওঠেন ফরিদ উদ্দিন। তিনিও এটা নিয়ে সারা বাংলায় আন্দোলনের মতো কাজ করে যাচ্ছেন। দারুণ একটি সমীকরণে দাঁড়ালো, সনেট কবি ফরিদ আহমেদ আর প্যালিন্ড্রোম কবি ফরিদ উদ্দিন। দুই কিংবদন্তির নাম মিলে গেল। সনেট যেভাবে ইতিহাসের পাতায় স্বাক্ষরিত হয়েছে, এবার তেমনি প্যালিন্ড্রোম স্বাক্ষরিত হচ্ছে। আপনি যদি মানতে কষ্ট হয়, তাহলে নিচের বাক্যের সঙ্গে মতান্তর হতে পারেন। মোহাম্মদ বাসার বলেছেন,'ফরিদ আহমেদ মধুসুদনের পরে আমাদের একমাত্র যদুধন মানে যক্ষের ধন। আমরা তাঁকে নিয়ে গর্বিত। কেউ কেউ গর্ভবতীও হতে পারেন চাইলে'। একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে শেষ করছি। ইংরেজি সাহিত্যের পর বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বেশি প্যালিন্ড্রোম লেখা হয়েছে। বাংলা ভাষায় সব ফরমেটে প্যালিন্ড্রোম লেখা হয়েছে। এখন শুধু একটি অভিধান ও একটি প্যালিন্ড্রোম উপন্যাস যিনি লিখতে পারবেন,তারাও ইতিহাসের পাতায় বেঁচে থাকবে।
আমিও বলে রাখি,আমরা প্যালিন্ড্রোম নিয়ে গর্বিত। আর কেউ যদি গর্বিত হতে না পারেন, তাহলে গর্ভবতী হতে পারেন।
Kavya Kishor is a Bangladesh Based Worldwide Literary Magazine By Parvej Husen Talukder, Which is regularly published in Bangla and English Language from Bangladesh.